হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম
বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া দেশটির ৩৪ জন সেনা, বিজিপি (বর্ডার গার্ড পুলিশ) সদস্যসহ ৪০ জনকে উড়োজাহাজে করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
৭ মে বুধবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ৪০ জনকে নিয়ে ফিরে যায় মিয়ানমারের একটি উড়োজাহাজ। যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ৬ জন মিয়ানমারের বেসামরিক নাগরিক। মাদক পাচার ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তাঁরা এত দিন কক্সবাজার কারাগারে বন্দী ছিলেন। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ছয়জনকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে তিন দফায় ৭৫২ জন মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের সমুদ্রপথে জাহাজে করে ফেরত পাঠানো হলেও এবার ৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয় উড়োজাহাজে করে।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, বিজিবির নিকট আশ্রিত মায়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৪ জন সদস্যকে প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে চলমান সহিংসতায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়লে তারা বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর কাছে সহায়তা প্রার্থনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত চারটি ধাপে মোট ৮৭৬ জন মায়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে নিরাপদে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। পরবর্তীতে টেকনাফ-দমদমিয়া-নাজিরপাড়া-শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত এলাকার অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ১১ জানুয়ারি ২০২৫ সময়কালে ৩৪ জন (বিজিপি-২১ জন, মায়ানমার সেনাবাহিনী-১৩ জন) সদস্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ৭ মে তাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া আরও ৬ জন মায়ানমার নাগরিকসহ মোট ৪০ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আশ্রয়প্রাপ্ত ৯১০ জনের মধ্যে ২৬ জন গুলিবিদ্ধ ও অসুস্থ সদস্যকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আশ্রয়কালীন সময়ে বিজিবি কর্তৃক খাদ্য, চিকিৎসা, পোশাক, আবাসন ও নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে, যা মানবিকতার একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বিজিবি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে মায়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে এই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। বিজিবি সংশ্লিষ্ট সকল স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
৭ মে বেলা ১১ টার দিকে মিয়ানমারের ৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে বাসে করে কক্সবাজার বিমানবন্দরে আনা হয়। এ সময় বিজিবি ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ছিল। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে বিমানবন্দরে আনা হয় সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া মিয়ানমারের ছয়জন নাগরিককে। বেলা দেড়টার দিকে বিমানবন্দরে অবতরণ করে মিয়ানমারের একটি বিমান।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের পরিচালক মো. গোলাম মর্তুজা হোসেন বলেন, ফিরে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মিয়ানমারের সেনা, বিজিপি, বিভিন্ন মামলায় সাজা শেষ হওয়াসহ ৪০ জন ছিলেন। যেহেতু কক্সবাজার বিমানবন্দর দিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যাত্রী গণমাধ্যমের ব্যবস্থা নেই, তাই মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। এই ব্যবস্থার আলোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কক্সবাজার আনা হয়। মিয়ানমারের ৪০ জন নাগরিকের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পাদন করেই তাঁদের বিমানে তোলা হয়।
বিজিবি কক্সবাজার অঞ্চলের কমান্ডিং অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএম ইমরুল হাসান বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জের ধরে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে চলতি সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত টেকনাফের দমদমিয়া, নাজিরপাড়া ও শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেনা ও বিজিপির এই ৩৪ সদস্য। তাঁদের মধ্যে ২১ জন বিজিপি ও ১৩ জন সেনাসদস্য। তাঁরা এত দিন বিজিবির হেফাজতে ছিলেন। এই ৩৪ জনের সঙ্গে বাংলাদেশের কারাগারে সাজাভোগ করা ৬ জনকে সংযুক্ত করে মোট ৪০ জনকে বিমানে করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো।
বিজিবি ও পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছরের ৯ জুন কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডবিøউটিএ জেটিঘাট থেকে ১৩৪ বিজিপি ও সেনাসদস্যকে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজে করে ফেরত পাঠানো হয়। গত বছরের ২৫ এপ্রিল সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানো হয় ২৮৮ জনকে। ১৫ ফেব্রæয়ারি প্রথম দফায় ফেরত পাঠানো হয় ৩৩০ জন বিজিপি ও সেনাসদস্যকে। তিন দফায় ফেরত পাঠানো ৭৫২ জনের সবাই রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে নিয়োজিত ছিলেন। ##